ছাত্রলীগ নিজেকে খুব গতিশীল ও গণতান্ত্রিক সংগঠন বলে দাবি করে। কিন্তু সেই গণতান্ত্রিক সংগঠনের কমিটি গঠন নিয়ে সোমবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে যা ঘটল, তা অত্যন্ত ন্যক্কারজনক। যেকোনো কমিটি হলে কেউ পদবঞ্চিত এবং কেউ পদপ্রাপ্ত হবেন। সাধারণত পদবঞ্চিতরা ক্ষুব্ধ হয়ে ভাঙচুর করেন, প্রতিপক্ষকে আক্রমণ করেন। কিন্তু এখানে ঘটেছে উল্টোটা। পদপ্রাপ্তরাই পদবঞ্চিতদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়েছেন। তাঁদের অপরাধ, তাঁরা সংবাদ সম্মেলন করে পদবঞ্চনার কথা জানিয়েছেন। পদাধিকারীরা এটিকে অপরাধ হিসেবে চিহ্নিত করে চেয়ার ছুড়ে মেরেছেন। মারধর করেছেন। এ ক্ষেত্রে নারী কর্মীরাও আক্রমণ থেকে রেহাই পাননি। হামলার ছবি সব পত্রিকায় ছাপা হয়েছে। রাতে টেলিভিশনেও দেখানো হয়েছে।ছাত্রলীগের নতুন কমিটির নেতারা কেউ বলেননি, ছাত্রদল, শিবির বা বাম হঠকারীদের কেউ এসে এই হামলা চালিয়েছেন। অনুপ্রবেশকারীদের ওপরও দায় চাপাননি। এর অর্থ মধুর ক্যানটিনে যাঁরা মার খেয়েছেন, আর যাঁরা মেরে প্রতিপক্ষকে হাসপাতালে পাঠিয়েছেন, তাঁরা উভয়ই ছাত্রলীগের।
দুই পক্ষই প্রধানমন্ত্রীর দোহাই দিলেও নতুন কমিটির নেতারা প্রধানমন্ত্রীর সিদ্ধান্তের জন্য অপেক্ষা করেননি। তার আগেই তাঁরা পদবঞ্চিতদের প্রতিবাদী সংবাদ সম্মেলন ডাকার জন্য উচিত শিক্ষা দিয়েছেন। পদবঞ্চিতদের অপরাধ, তাঁরা সংবাদ সম্মেলন করে বলেছেন, নতুন কমিটিতে অছাত্র, বিবাহিত, মাদক ও হত্যা মামলার আসামিরাও আছেন। ছাত্রত্ব না থাকলে ছাত্রলীগ করতে পারেন না। আর বিবাহিতদের নেতৃত্ব দেওয়ার বিষয়েও গঠনতন্ত্রে বাধা আছে। ইত্তেফাক শিরোনাম করেছে, ‘এগারো মাস পর পূর্ণাঙ্গ কমিটি ছাত্রলীগের: পদে আছেন অছাত্র, মাদক ব্যবসায়ী আর হত্যা মামলার আসামি’।
এ দিকে আহত নেতা কর্মীদের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক হাসপাতালে তাঁদের দেখতে গেলে দুই পক্ষের মধ্যে পাল্টাপাল্টি স্লোগান হয়। ছাত্রলীগের এই বিরোধ সত্তর ও আশির দশকের কথা মনে করিয়ে দেয়। সত্তর দশকে বিরোধের কারণে মুহসীন হলে ছাত্রলীগের সাত কর্মীকে হত্যা করা হয়, যাঁর নেতৃত্বে ছিলেন ছাত্রলীগের তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক শফিউল আলম প্রধান। আর আশির দশকের বিরোধের জের ধরে ছাত্রলীগ কাদের-চুন্নু নামে দুই ভাগে ভাগ হয়ে যায়।
ছাত্রলীগের ৩০১ সদস্যের কমিটির বিরোধ কীভাবে নিষ্পত্তি হবে, সেই জবাব ভবিষ্যতে পাওয়া যাবে। তবে ছাত্রলীগের আক্রান্ত কর্মীরা এই ভেবে স্বস্তি পেতে পারেন যে তাঁরা পদবঞ্চিত হলেও মারবঞ্চিত হননি। ছাত্রলীগের হাটে গেলে সবাই কিছু না কিছু পান। কেউ পদ পান, কেউ মার খান।