চলচ্চিত্রের শুটিংয়ে গিয়ে লোকসভা নির্বাচনের প্রচারে যোগ দিয়ে নিষেধাজ্ঞার কবলে পড়ে মাস দেড়েক আগে ভারত ছেড়েছিলেন চিত্রনায়ক ফেরদৌস; সেই নিষেধাজ্ঞা কবে কাটবে-তা এখনও জানা নেই তার।
গত মাসের মাঝামাঝিতে ‘দত্তা’ নামে একটি চলচ্চিত্রের শুটিংয়ের ফাঁকে পশ্চিমবঙ্গের উত্তর দিনাজপুর জেলার রায়গঞ্জে লোকসভায় তৃণমূল কংগ্রেসের প্রার্থী কানাইয়ালাল আগরওয়ালের নির্বাচনী প্রচারে অংশ নিয়ে ক্ষমতাসীন দল বিজেপির রোষানলে পড়েছিলেন দুই বাংলার জনপ্রিয় এ অভিনেতা।
বিজনেস ভিসায় ভারতে গিয়ে রাজনৈতিক প্রচারে অংশ নেওয়ার দায়ে ভারতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় তার ভিসা বাতিল করে দেশ ছাড়ার নির্দেশ দেয় ফেরদৌসকে। পাশাপাশি তাকে ‘কালো তালিকাভুক্ত’ করার খবরও দিয়েছিল দেশটির গণমাধ্যম।
তাকে নিয়ে নির্মিতব্য ‘দত্তা’ চলচ্চিত্রের ২০ ভাগ দৃশ্যের শুটিং সম্পন্ন হয়েছে; বাকি আছে ৮০ ভাগ দৃশ্যের শুটিং। সংশয়ের মাঝেও চলচ্চিত্রটি থেকে খ্যাতিমান এ অভিনেতাকে ‘হারাতে চান না’ বলে জানালেন ছবিটির নির্মাতা নির্মল চক্রবর্তী।
সম্প্রতি টাইমস অব ইন্ডিয়াকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি জানান, প্রায়ই ৮০ ভাগ শুটিং এখনও বাকি থাকায় আপাতত ফেরদৌসকেই চলচ্চিত্রে রাখতে চান তিনি। তার বিকল্প এখনই ভাবছেন না বলেও জানান তিনি।
কলকাতার চলচ্চিত্রে ফেরার জন্য এ অভিনেতা মুখিয়ে থাকলেও নিষেধাজ্ঞা না কাটায় সহসাই ভারতে ঢুকতে পারছে না। ফলে ‘দত্তা’র চলচ্চিত্র তো বটেই কলকাতায় তার প্রতিষ্ঠিত ক্যারিয়ারও হুমকির মুখে পড়েছে।
আদৌ কবে নিষেধাজ্ঞা কাটবে তা এখনও জানা নেই ‘হঠাৎ বৃষ্টি’ চলচ্চিত্রের এ অভিনেতার।
তিনি বলেন, “চলচ্চিত্রগুলোর বিষয়ে তার সঙ্গে কোনো কথা হয়নি। আরও কিছুদিন যাক। দেখা যাক কী হয়।”
৫০টিরও বেশি কলকাতার চলচ্চিত্রে অভিনয় করে কলকাতায় খ্যাতি পাওয়া এ অভিনেতা বললেন, “যদি আমার ফিরতে দেরি হয় তাহলে আমি ওদেরকে বলব সিনেমার কাজটা পেছাতে।”
‘দত্তা’ চলচ্চিত্রে তার সহশিল্পী হিসেবে আছেন ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত। ১৫টির মতো চলচ্চিত্রে একসঙ্গে বড়পর্দায় হাজির হয়েছেন তারা। পেশাদার সম্পর্কের বাইরে ব্যক্তিজীবনে তারা একে অপরের ভালো বন্ধু তারা।
পরিচালক নির্মলের মতো ঋতুপর্ণাও আশা করছেন জটিলতা কাটিয়ে তার প্রিয় বন্ধু ও সহশিল্পী ফেরদৌস শিগগিরই কলকাতার চলচ্চিত্রে ফিরবেন।
ঋতুপর্ণা বলেন, “কলকাতায় ফেরদৌসের দারুণ গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে। কয়েক দশক ধরে ও কলকাতায় সুনামের সঙ্গে কাজ করছে। আমার বিশ্বাস, আইনটা জানা ছিল না; থাকলে সে প্রচারণায় যেত না।”
তার ব্যাপারে কোনো সিদ্ধান্তে নেওয়ার ক্ষেত্রে বিষয়গুলো বিবেচনায় রাখা উচিত বলে মনে করেন দুই বাংলার জনপ্রিয় এ অভিনেত্রী।
দেশে ফিরে চিত্রনায়ক ফেরদৌস এক বিবৃতিতে ক্ষমা চেয়ে বলেছেন, ‘আবেগের বশে’ পশ্চিমবঙ্গে নির্বাচনী প্রচারে তার অংশ নেওয়াটা ‘ভুল’ ছিল বলে এখন বুঝতে পারছেন তিনি।
“আমি স্বাধীন বাংলাদেশের একজন নাগরিক। একটি স্বাধীন দেশের নাগরিক হিসাবে অন্য একটি দেশের নির্বাচনী প্রচারণায় অংশগ্রহণ কোনোভাবেই উচিত নয়।
“আমার অনিচ্ছাকৃত ভুলের জন্য আমি ক্ষমা প্রার্থনা করছি। আশা করি, সংশ্লিষ্ট সকলে আমার অনিচ্ছাকৃত ভুলকে ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।”
তবে এখনও ভারতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে কোনো সবুজ সংকেত পাননি তিনি। উল্টা সেই ঘটনার জেরে বাংলাদেশের আরেক অভিনেতা আরিফিন শুভ কলকাতার এক চলচ্চিত্র থেকে বাদ পড়েন।
কলকাতার পরিচালক শুভজিৎ মিত্রের ‘অভিযাত্রিক’ চলচ্চিত্রে অপু চরিত্রে অভিনয়ের কথা থাকলেও শুটিংয়ের চারদিন আগে চলচ্চিত্রটির প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান থেকে শুভকে জানানো হয়, অনভিপ্রেত সামাজিক ও রাজনৈতিক কারণে তার সঙ্গে কাজটি করতে পারছে না প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানটি।
পরিচালক সূত্রে জানা যায়, ফেরদৌস ও আরেক অভিনেতা নূরের ভিসা বাতিলের পর কোনো বাংলাদেশি শিল্পীকে ওয়ার্ক পারমিট দিচ্ছে না ভারত সরকার। ফলে ইচ্ছা থাকা সত্বেও শুভকে বাদ দিতে হয়েছে চলচ্চিত্রটি থেকে। শুভর চরিত্রে ভারতেরই অভিনয়শিল্পীকে দিয়ে কাজ চালিয়ে নেওয়া হচ্ছে বলে জানা গেছে।