হাটহাজারী ১০০ মেগাওয়াট পিকিং পাওয়ার প্লান্টকে ২০ লাখ টাকা জরিমানা করেছে চট্টগ্রামের পরিবেশ অধিদপ্তর। প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজননকেন্দ্র হালদা নদী দূষণের দায়ে এই জরিমানা করা হয়।
পাশাপাশি পূর্ণাঙ্গ ইফ্লুয়েন্ট ট্রিটমেন্ট প্লান্ট (ইটিপি) নির্মাণ ও অয়েল সেপারেটর কার্যকর না করা পর্যন্ত বিদ্যুৎকেন্দ্রটির উৎপাদন বন্ধ রাখারও নির্দেশ দিয়েছে অধিদপ্তর।
৯ জুলাই হালদায় বিদ্যুৎকেন্দ্রটির ফেলা বর্জ্যের নমুনা সংগ্রহ করে পরিবেশ অধিদপ্তর। এরপর পরিবেশ অধিদপ্তরের ল্যাবে পরীক্ষা করা হয় এ নমুনা। পরীক্ষার ফলাফলে সিওডির মাত্রা পাওয়া যায় সহনীয় মাত্রার প্রায় ১৮ গুণ বেশি। অয়েল ও গ্রিজের মাত্রাও পাওয়া যায় নির্ধারিত মানের অনেক বেশি, যা হালদা দূষণে ভয়াবহ ভূমিকা রাখছে বলে মনে করছেন পরিবেশ অধিদপ্তরের রসায়নবিদরা।
পরিবেশ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, ২০১২ সালে বিদ্যুৎকেন্দ্রটি উদ্বোধনের পর ওই বছরই পরিবেশ দূষণের অভিযোগে ১০ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়। পরবর্তী সময়ে মন্ত্রণালয়ের সুপারিশে বিদ্যুৎকেন্দ্রটি ইটিপি নির্মাণ করবে এ শর্তে জরিমানা মওকুফ করা হয়। কিন্তু ইটিপি নির্মাণ না করে ২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারিতে ইটিপির নকশা পরিবেশ অধিদপ্তর থেকে অনুমোদন করে। নতুন নকশা ছয় মাসের মধ্যে বাস্তবায়নের কথা থাকলেও ইটিপি নির্মাণের কাজ এখনো শুরু করেনি বিদ্যুৎকেন্দ্রটি।
পরিবেশ অধিদপ্তরের চট্টগ্রাম অঞ্চলের সহকারী পরিচালক (কারিগরি) মুক্তাদির হাসান জানান, নদীদূষণ ও ইটিপি কার্যকর না থাকায় হাটহাজারী পাওয়ার প্লান্টকে শুনানি শেষে জরিমানা করা হয়। একই সঙ্গে ইটিপি নির্মাণ ও অয়েল সেপারেটর কার্যকর না করা পর্যন্ত বিদ্যুৎ উৎপাদন বন্ধ রাখার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। তবে তারা চাইলে এ জরিমানার বিরুদ্ধে আপিল করতে পারবে।
৯ জুলাই হাটহাজারীর বিদ্যুৎকেন্দ্রটির বর্জ্যে হালদা দূষণের প্রমাণ পাওয়ার পর অধিদপ্তরের পরিচালক আজাদুর রহমান মল্লিক ওইদিনই বিদ্যুৎকেন্দ্র কর্তৃপক্ষকে ১৭ জুলাই চট্টগ্রাম মহানগর কার্যালয়ে শুনানিতে হাজির হওয়ার নোটিশ দেন। শুনানিতে বিদ্যুৎকেন্দ্রের ব্যবস্থাপক শফিউদ্দিন আহমদ ও নির্বাহী প্রকৌশলী সৈয়দ মো. এরফানুল কিবরিয়া যুক্তিসংগত প্রমাণ দিতে না পারায় অধিদপ্তরের চট্টগ্রাম অঞ্চলের পরিচালক মোয়াজ্জম হোসাইন জরিমানার নির্দেশ দেন।
এ প্রসঙ্গে হালদা রিভার রিসার্চ ল্যাবরেটরির সমন্বয়ক ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক মনজুরুল কিবরিয়া বলেন, আমরা দীর্ঘদিন ধরে বলে আসছি হাটহাজারীর এ বিদ্যুৎকেন্দ্র হালদা দূষণে সরাসরি জড়িত। প্রতিষ্ঠানটি যখন বর্ষা আসে তখন গোপনে বর্জ্য হালদায় ছেড়ে দেয়। তবে শুধু জরিমানা করলে সমস্যার সমাধান হবে না। যারা বিদ্যুৎকেন্দ্রটি পরিচালনার সঙ্গে জড়িত, তাদের শাস্তির আওতায় আনতে হবে।