আওয়ামী লীগের শুদ্ধি অভিযানে নতুন নিশানা তৈরী হয়েছে। ঢাকা উত্তর এবং দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের অনেক ওয়ার্ড কাউন্সিলরা পরিণত হয়েছে দানবে। আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীল সূত্রগুলো বলছে, ছাত্রলীগ- যুবলীগের পাশাপাশি এবার ওয়ার্ড কাউন্সিলরদের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করা হবে।
এছাড়াও আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীল সূত্রগুলো আরও বলছে, ঢাকা উত্তরের ৭৫টি এবং ঢাকা দক্ষিণের ৫৪টি ওয়ার্ডের অধিকাংশ কমিশনারের বিরুদ্ধেই দুর্নীতি, অনিয়ম, চাঁদাবাজি, বাজার দখল ও ভূমি দখলসহ নানা রকম অভিযোগ রয়েছে। এ সমস্ত অভিযোগের প্রেক্ষিতেই এবার আইন প্রয়োগকারী সংস্থা তাদের বিরুদ্ধে অভিযানের প্রস্তুতি নিচ্ছে।
ইতিমধ্যেই নয় নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর আলহাজ্ব এ,কে,এম মমিনুল হক সাঈদের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে। মমিনুল সাঈদ বর্তমানে দেশের বাইরে পালিয়ে গেছেন। আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত ১৪ সেপ্টেম্বর আওয়ামী লীগের ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠকে দুর্নীতির বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেন। তিনি বলেছিলেন, ছাত্রলীগের চেয়েও যুবলীগে অনেক বড় মনস্টার (দানব) তৈরী হয়েছে। কিন্তু আওয়ামী লীগের শীর্ষস্থানীয় একাধিক নেতা বলেছেন, ছাত্রলীগ- যুবলীগের চেয়েও বড় মনস্টারে পরিণত হয়েছে ওয়ার্ড কাউন্সিলররা।
তাদের অভিযোগ, ওয়ার্ড কাউন্সিলররাই সবচেয়ে বড় ক্ষতি করেছে সংগঠনের। আওয়ামী লীগের একজন সাংগঠনিক সম্পাদক বলেছেন যে, শুদ্ধি অভিযানের সময় আমরা বিভিন্ন এলাকার ওয়ার্ড কাউন্সিলরদের বিরুদ্ধেও অভিযোগ পাচ্ছি। এই অভিযোগগুলো যাচাই বাছাই করা হচ্ছে। অধিকাংশ অভিযোগগুলো টেন্ডারবাজি, সন্ত্রাসীদের মদদ দেওয়া, অন্যের জমি এবং সম্পদ দখল করা ইত্যাদি। ওয়ার্ড কাউন্সিলরদের পৃষ্টপোষকতায় স্থানীয় পর্যায়ের মাদক ব্যবসাসহ নানা রকম অপকর্ম সংগঠিত হচ্ছে বলেও আওয়ামী লীগের একাধিক দায়িত্বশীলরা নিশ্চিত করেছে।
আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার সূত্রে জানা গেছে যে, ইতোমধ্যে আইনপ্রয়োগকারী সংস্থাও অন্তত ৪৪ জন কাউন্সিলরের কার্যক্রম খতিয়ে দেখছেন, পর্যালোচনা করছেন এদের মধ্যে অন্তত ১৯ জন নজরদারির মধ্যে আছেন। এদের বিদেশযাত্রার ব্যাপারেও নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে।
অনুসন্ধানে দেখা যায়, সাম্প্রতিক শুদ্ধি অভিযানে অনেক কাউন্সিলর গা ঢাকা দিয়েছেন, আত্মগোপনেও রয়েছেন অনেকেই। স্থানীয় পর্যায়ে তাদের প্রভাব প্রতিপত্তিও কিছুটা কমেছে।
এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীল সূত্রগুলো বলছে, এরকম অনেক কাউন্সিলর আইন নিজের হাতে তুলে নিতেন, স্থানীয় পর্যায়ে বিচার করতেন- এ সংক্রান্ত তথ্যপ্রমাণ এখন আওয়ামী লীগের হাতে আসছে।
এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, অনেকের বিরুদ্ধেই অভিযোগ আসছে। সেই অভিযোগগুলো যাচাইবাছাই করা হচ্ছে। যার বিরুদ্ধেই অভিযোগ আসুক না কেন, সে এমপি হোক বা কাউন্সিলর হোক, তাকে ছাড় দেওয়া হবে না। এ ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রী সুনির্দিষ্ট ঘোষণা দিয়েছেন। কাজেই আমরা আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে নির্দেশ দিয়েছি যে যার বিরুদ্ধেই সুনির্দিষ্ট অভিযোগ এবং তথ্যপ্রমাণ পাওয়া যাবে তার বিরুদ্ধেই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
উল্লেখ্য, ঢাকা সিটি করপোরেশনকে দু’টি ভাগে বিভক্ত করার পর দুই সিটিতে নির্বাচনে যারা কাউন্সিলর হয়েছেন তাদের অধিকাংশই আওয়ামী লীগের। কিন্তু এই কাউন্সিলরদের কাছ থেকে স্থানীয় পর্যায়ের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের যে ভূমিকা প্রত্যাশা করা হয়েছিল সেই ভূমিকা পাওয়া যায়নি। বরং তারা কোথাও এমপিদের সঙ্গে মিলে, কোথাও কোথাও নিজেরাই নিজেদের দানবে পরিণত করেছেন। আর এরকম সব মনস্টার বা দানবের বিরুদ্ধেই ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছেন স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী।